ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

জেলায় কলেজ গুলোতে ভর্তি নিয়ে গলাকাটা বাণিজ্য

কক্সবাজারের বেশিরভাগ কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ইচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি ফির নামে গলাকাটা বাণিজ্য করা  হচ্ছে। বোর্ড নির্ধারিত ফির চেয়ে ৩ গুন বেশি আদায় করছে কয়েকটি কলেজ। এর শীর্ষে আছে সিটি কলেজ আর কমার্স কলেজ। এদিকে অতিরিক্ত ফি আদায় করায় অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবি শিক্ষার্থীরা কলেজে ভর্তি হতে চরম আর্থিক সমস্যায় পড়েছেন বলে জানা গেছে। তাৎক্ষণিক ভর্তি ফি দিতে না পারলে আরো বেশি টাকা দিয়ে পেছনের অপেক্ষমান শিক্ষার্থীকে ভর্তি করাচ্ছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাই অনেক দরিদ্র্য পরিবারের অভিভাবকরা চড়া সুদ নিয়েও সন্তানদের কলেজে ভর্তি করাতে বাধ্য হচ্ছে। এদিকে কলেজ গুলোর গলাকাটা বাণিজ্যে দিশেহারা সাধারণ মানুষ দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সারা দেশে চলমান একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে কলেজগুলোকে বোর্ড কর্তৃক সব মিলিয়ে ২২০০ টাকা, সাথে সামান্য কিছু নিজস্ব নির্ধারিত তহবিল নিতে পারে এমন নির্দেশনা দিয়ে বোর্ড পরিপত্র জারি করলেও তা মানছে না কক্সবাজারের বেশিরভাগ কলেজ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কক্সবাজার সিটি কলেজে ভর্তি ফি আদায় করা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ৬০৫০ টাকা । এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিটি কলেজের অধ্যাপক আবুল কালাম বলেন, ভর্তি ফি কলেজ কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করেছে। সেখানে কারো কিছু করার নেই। এ সময় সিটি কলেজে ভর্তিচ্ছু শাহ নিয়াজ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, বাণিজ্য বিভাগে আমাদের কাছ থেকে ৬ হাজার ৫০ টাকা নিয়েছে। তাছাড়া এখানকার পিওনরাও টাকা চাইছে। আমি এখনি টাকা দিতে না পারলে পরের অপেক্ষমানকে ভর্তি করাবে। আর আমি ভর্তি হতে পারবো না বলে হুমকি দিচ্ছে। শহরের টেকপাড়ার বাসিন্দা আবদুল খালেক মাঝি বলেন, আমার ২ মেয়ে সিটি কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য অপেক্ষমান ছিল ১১ জুলাই তাদের ভর্তি করাতে গিয়ে শুনি ১২ হাজার ১০০ টাকা লাগবে। আমি শুনে হতবাক, পরে আমি কিছু ভর্তি ফি কমানোর জন্য সেখানে অনেক চেষ্টা করেও কোন লাভ হয়নি। তারা আরো বলছে এখনি টাকা এনে দিতে না পারলে অন্যজনকে নিয়ে নেবে। আমি দেখছি সেখানে ১০ হাজার টাকা দিয়েও ভর্তি হতে অনেকে দাঁড়িয়ে আছে। পরে বাধ্য হয়ে বাড়িতে গিয়ে স্ত্রীর এক জোড়া কানের দোল ছিল সেটা বিক্রি করে ভর্তি ফি দিয়েছি। আর অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায়ের পরের স্থানে আছে কক্সবাজার কমার্স কলেজ। সেখানে ভর্তি ফি নেওয়া হচ্ছে ৫৫৫০ টাকা। তবে এখানে শিক্ষার্থীরা জানান বাস্তবে তাদের কাছ থেকে আরো বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া মাসে আরো ৫০০ টাকা বেতন ছাড়াও এখানে পড়তে হলে কোচিং এবং সেশন ফিসহ আরো অনেক খরচ আছে। তাই কোন দরিদ্র্য পরিবারের ছেলে মেয়েদের এখানে পড়া খুবই কঠিন। সরজমিনে গিয়ে কলেজে ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, আমার মেয়েকে এখানেই ভর্তি করাতে খুব আগ্রহি। কারণ বাড়ির কাছে আসা যাওয়ার সুবিধা আছে তাই। তবে ভর্তি ফি জোগাড় করেছি পার্শ্ববর্তী এক ব্যক্তি থেকে চড়া সুদ নিয়ে। তবে এ ব্যাপারে কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ফজলুল করিম বলেন, কমার্স কলেজে কোন সরকারি অনুদান নেই, এটা সম্পূর্র্ণ ছাত্র বেতনের উপর চলে, সেটাও বিবেচনায় নিতে হবে।
এদিকে রামু কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল হক বলেন, রামু কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ফি ৩০৮০ টাকা। আমরা এখানে বোর্ড নিয়ম অনুযায়ী ফি আদায় করছি। মহেশখালী কলেজের অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন জানান, মহেশখালী কলেজে ভর্তি ফি ২৫০০ টাকা, তবে এখানে বেশিরভাগই দরিদ্র পরিবারের ছেলে মেয়ে তাই সবাই নির্ধারিত ফি দেয় না। তবুও আমরা ভর্তি করাচ্ছি। উখিয়া কলেজের অধ্যাপক অজিত দাশ বলেন, এই কলেজে ভর্তি ফি নেওয়া হচ্ছে ২৬০০ টাকা। এর ভেতরে কোন দরিদ্র পরিবারের হলে তাকে মওকুফ করা হচ্ছে। চকরিয়া ডুলাহাজারা কলেজের অধ্যাপক পরীক্ষিত বড়–য়া টুটুন বলেন, এখানে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে ৩০০০ টাকা। এদিকে সরকারি মহিলা কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ফি নেওয়া হচ্ছে ২৪০০ টাকা তবে এরমধ্যে পুরো এক বছরের সেশন ফিসহ বলে জানান কর্তৃপক্ষ। এদিকে কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর একেএম ফজলুল করিম বলেন, এখানে মানবিকে ২৪০০ আর বিজ্ঞানে ২৬০০ টাকা ভর্তি ফি নেওয়া হচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ বোর্ড নির্ধারিত। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইটিসি কাজী আবদু রহমান বলেন, আমি নিজেই অনেক অভিভাবকের কাছ থেকে  কলেজে ভর্তি ফি বেশি নেওয়ার অভিযোগ শুনেছি। এটা খুবই দুঃখজনক। কোন অভিভাবক বা শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ করলে সে বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যেত।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন বলেন, বোর্ড নির্ধারিত ফির বাইরে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত ফি নিলে সেটা খুবই অন্যায়। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: